অনুমতি ছাড়া সভা-সমাবেশ করলেই ব্যবস্থা: নতুন ডিএমপি কমিশনার
রাজনৈতিক সংগঠনগুলো অনুমতি ছাড়া কোনো সভা সমাবেশ করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান।
সোমবার (২ অক্টোবর) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। গত শনিবার ৩০ সেপ্টেম্বর ডিএমপির ৩৬তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন হাবিবুর রহমান। দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আসলেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আজকেও বিরোধী দলের একটি প্রোগ্রাম রয়েছে। তারা আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে। আমরা যেভাবে অনুমতি দিয়েছি সেই অনুমতি মেনে নিয়েই তারা কাজ করছে। কোনো সংগঠন যদি অনুমতি ছাড়া কোনো কিছু করতে চায় তাহলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তার অধ্যাদেশ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এডিসি হারুণকাণ্ডে ডিএমপির নতুন কমিশনার বলেন, যার যতটুকু অপরাধ ঠিক ততটুকু শাস্তি দেওয়া হবে। বাংলাদেশ পুলিশ একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। বাহিনীর যে নিয়ম কানুন আছে সেই নিয়ম কানুনের মধ্যে সবাইকে চলতে হবে। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটির রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে অপরাধী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার যে ডিপার্টমেন্ট আছে সেটিও সরকারি বিধিবিধান মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে। আমি মনে করি জড়িত দুজন সরকারি ডিপার্টমেন্টের ও দুজনই ক্যাডার কর্মকর্তা। দুজনেরই নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের রয়েছে। যার যা দায়িত্ব সে সেই পালন করবে বলে আমি মনে করি।
সাংবাদিকরা ডিএমপি কমিশনারকে বলেন, একটি রাষ্ট্র থেকে ভিসা নীতি ঘোষণা এসেছে। পুলিশ নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে যদি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করে তাহলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এটা নিয়ে পুলিশ বাহিনীর ভেতরে কোনো ধরনের প্রভাব বা আতঙ্ক রয়েছে কি না। থাকলে আপনারা মনোবল চাঙ্গা জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন?
এর উত্তরে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, আমি নির্বিঘ্নে বলতে চাই। একটি দেশের ভিসা নীতি কি হবে এটি তাদের বিষয়। এটা নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের চিন্তার কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না। আমাদের সদ্যবিদায়ী প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আমি কোনদিন… একটি দেশের নাম উল্লেখ করে বলেছেন, আমি কোনদিন ওই দেশে যাই নাই, আমার যাওয়ার ইচ্ছাও নেই। উনি প্রধান বিচারপতি ছিলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমি যোগদান করে আমার পুলিশের ভেতরে এ রকম কোনো চিন্তার বিষয় দেখি নাই। এটি একটি পর্যায়ের ব্যবস্থা। সংগঠন পর্যায়ের কোনো ব্যবস্থা নয়। সংগঠন হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সব সময় ঢাকাবাসীর জন্য এবং ঢাকার জনগণের জন্য, নিরাপদ ঢাকার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তারা (পুলিশ) এগুলো নিয়ে কোনো চিন্তা করে না।
নির্বাচন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভিত্তি উল্লেখ করে হাবিবুর রহমান বলেন, জনগণ যাতে নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে, ভোট দিতে পারে সেজন্য যা যা প্রয়োজন ডিএমপির পক্ষ থেকে করা হবে।
সেবার মান বাড়াতে হটলাইন প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ডিএমপির থানা গুলোতে সেবার মান বাড়াতে ‘মেসেজ টু কমিশনার’ হটলাইন সেবা চালু করা হবে। এই হটলাইন সেবার মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা সরাসরি ঢাকা মহানগর কমিশনারের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন। ভুক্তভোগীরা থানায় গিয়ে সেবা না পেলে যে কেউ কমিশনার বরাবর মেসেজ দিতে পারবেন। এ ছাড়া ডিবিতে (গোয়েন্দা পুলিশ) গিয়েও সেবা না পেলে যে কেউ মেসেজের মাধ্যমে সরাসরি আমাকে জানাতে পারবেন। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলব। সমস্যা সমাধান করব।
পুলিশের ব্যক্তিগত অপরাধের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে, তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ হোক, পুলিশের বাবা হোক, অপরাধী অপরাধীই।
নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ করা গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন নবনিযুক্ত কমিশনার। ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া যেসব অপরাধী জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছে, তাদের কঠোর মনিটরিংয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপরাধী ছোট হোক বা বড়, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ট্র্যাডিশনাল ক্রাইম থেকে ডিএমপির ক্রাইমের ধরন আলাদা। নতুন ধরনের ক্রাইম অভিযোগ আসছে ডিএমপিতে। এর বড় কারণ প্রযুক্তি। সাইবার ক্রাইম মোকাবিলায় ডিএমপি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। ডিএমপির দক্ষতা ও যোগ্যতা অনেক বেশি।
এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. খ. মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মহা. আশরাফুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, উপ-পুলিশ কমিশনার ও বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।