নকল মানহীন পণ্যের ভিড়ে লাইবা রুটি মেকার অস্তিত হারাচ্ছে
দীপক চক্রবর্তী, মাগুরা প্রতিনিধি : নকল রুটি মেকার বাজারের ব্যাঙের ছাতার মতো ছেয়ে যাওয়ায় লাইবা রুটি মেকার টিকে থাকতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আজ থেকে ১২ বছর আগে মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার বুনাগাতিতে বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম রুটি মেকার যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেন মো: হুমায়ন কবির। প্রথমে নিজ বাড়িতে শুরু করেন কাজটি। তারপর ৩ জন শ্রমিক নিয়ে ধীরে ধীরে কাজের পরিধি বাড়াতে থাকেন তিনি। বর্তমানে নিজ গ্রামেই এ শিল্পকে বানিজ্যিক ভাবে প্রসারিত করার জন্য গড়ে তুলেছেন রুটি মেকারের আধুনিক কারখানা। এখানে এ গ্রামেরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৫০ জন শ্রমিক কাজ করেন তার কারখানায়। লাইবা রুটি মেকারের মান আধুনিক ও মান সম্পন্ন হওয়ায় ইতিমধ্যে এটি সরকারের পক্ষ থেকে পেয়েছে প্যার্টান প্লানের স্বীকৃতি। তাই বাংলাদেশে তৈরি আধুনিক মানের লাইবা রুটি মেকার বিশ্বের ২৪টি দেশে সমাদৃত।
বর্তমানে লাইবা রুটি মেকার বাইরের দেশ অট্রেলিয়া ,কানাডা,আমেরিকাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানী হচ্ছে। লাইবা কৃতপক্ষ বলছে দেশে লাইবা রুটি মেকারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেকে এর প্যার্টান নকল করে মানহীন পণ্য কম দামে বাজারে বিক্রি করছে অনেকে। কিন্তু এ নকল মানের পণ্য দেখভাল করার জন্য তদারকি না থাকার কারণে লাইবা রুটি মেকার বার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্পটি।
লাইবা রুটি মেকারের সত্ত্বাধিকারি মো: হুমায়ন কবির বলেন,২০১১ সালের শেষের দিকে আমি শালিখার বুনাগাতিতে নিজ বাড়িতে শুরু করি এ রুটি মেকারের কাজ। আমিই বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম এ পণ্যটি বাজারে নিয়ে আসি।প্রথমদিকে কয়েক বছর এ পণ্যটির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নিজ গ্রামের এটি বানিজ্যিক ভাবে প্রসারিত করার জন্য লাইবা রুটি মেকারের বৃহৎ কারখানা তৈরি করি। আমাদের পণ্যটির সেলস্ সেন্টার ঢাকার আগারগায়ে। সেখান থেকে এ পণ্যটি ডিলালের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় লাইবা রুটি মেকার আরো আধুনিক ও মান সম্পন্ন করার জন্য আমি প্যার্টান প্লান স্বীকৃতি পায়। তারপর কাজের পরিরিধি বাড়িয়ে কারখানায় বিনিয়োগ করি।
শ্রমিকের সংখ্যা শতাধিক থেকে বেশি বাড়ায়। লাইবা রুটি মেকারের মান আধৃনিক হওয়ার কারণে বাইরের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি শুরু করি। বিশেষ করে ইউরোপের দেশ অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে আমার পন্য যেতে শুরু করে। দেশের পাশাপাশি বিদেশে সাড়া ভালো পাই। করোনাকালীন সময়ের পর বর্তমানে আমাদেশে দেশে আমার এ পণ্যের মান নকল করে কিছু আসাধ্য ব্যবসায়ী বাজারে মানহীন কমদামে পণ্য বিক্রি শুরু করে। যেখানে আমার পন্য ৬টি সাইজে বাজারে চলমান সেখানে তারা নকল সাইজে রুটি মেকার বাজারে আনে। আমার পণ্যেও মান সর্বনিম্ন ইকো টু-সেভেন মডেল ২২শ’৫০টাকা এবং সব্বোর্চ এসটি সেভেন টু ফাইভ ৫ হাজার ৫শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু নকল মানহীন রুটি মেকার বাজাওে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১হাজার থেকে ১২ শ” টাকার মধ্যে। তাই বাজারের চলমান এ নকল পণ্যেও কাছে আমরা বার বার মার খাচ্ছি। এ নকল পণ্য যদি বন্ধ হতো তাহলে লাইবা রুটি মেকার দেশে আরো বেশি পণ্য উৎপাদিত হতো।
কথা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন,বর্তমানে ব্যবস্যার বাজার খুবই মন্দা। চাহিদা কম থাকায় কারখানায় উৎপাদন কম। তাই শ্রমিক ছাটাই করে বর্তমানে ৫০ জন কাজ করছে। এ শিল্পকে বাচিঁয়ে রাখতে সরকারের প্রতি তিনি জোর আহবান জানান। বিশেষ করে বাজারে নকল মানহীন রুটি মেকার আমার ব্যবসাকে ক্ষতি করছে। যে সব পরিবার ব্যস্ত সময় পার করেন তাদেও জন্য আমার এই রুটি মেকার। যা সময় ও শ্রম দুটি বাচাঁবে। অল্প সময়ে তৈরি হবে এ যন্ত্র দিয়ে রুটি। রুটি হবে গোলাকার এবং বড়। আমার এ পণ্যটি যারা ক্রয় করবে তারা পাবে এ যন্ত্রের সাথে একটি ব্যবহারের ম্যানুয়াল। যা ব্যবহারে এটি সাহায্য করবে। তাই শিল্পকে বাচাঁতে আমি সরকারের কাছে জোর দাবী জানাছি।
এ কারখানার নারী শ্রমিক হোসনে আরা জানান,আমি এখানে শুরু থেকে কাজ করছি। এখানের আয় দিয়ে আমার সংসার চলে। এ কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে আমি বেকার হয়ে পড়বো। তাই আমরা চাই এ কারখানা বেঁচে থাক।
শ্রমিক আছাদুল ইসলাম বলেন,আমি বাড়ি পটুয়াখালি জেলায়। আমি এ কারখানায় ৫ বছর কাজ করছি। বর্তমানে লাইবা রুটি মেকার সারাদেশে চলছে। আমরা প্রতিদিন অর্ধ-শতাধিক মাল উৎপাদন করছি। এ রুটি মেকার প্রস্তত করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। সারাদেশে নকল রুটি হয়ে যাওয়ায় আমরা বিপাকে আছি।
কারখানার ম্যানেজার আলমগীর জানান,আমাদের লাইবা রুটি মেকার সারাদেশে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এখন আরো আধুনিক প্যাকেটে বাজারজাত করছি আমরা। সব সময় আমরা এ শিল্পের মান বৃদ্ধিতে কাজ করছি। বর্তমানে লাইবা রুটি মেকার দেশে চাহিদা ছাড়িয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু বাজারে নকল রুটি মেকারের ভিড়ে এ শিল্পটি এখন অস্তিত হারাচ্ছে। আর এ জন্য যথাযথ কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।