শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৪ অপরাহ্ন

সাগরের সৃষ্টি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’, আঘাত হানতে পারে বাংলাদেশে

Reporter Name / ৩০৬ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৩

ডেস্ক রিপোর্ট (আবহাওয়া) : বঙ্গোপসাগরে ফের একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে লঘুচাপটি ক্রমে শক্তিশালী হয়ে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সকাল ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’তে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। একই সঙ্গে এটি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা।
গত মাসে (অক্টোবর) বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর সৃষ্টি হয়। এটি গত ২৪ অক্টোবর কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগামীকাল (শুক্রবার) ভোর নাগাদ গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এটি উত্তর ও উত্তর-পূর্বে বাংলাদেশের দিকেই এগোচ্ছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী এটি শনিবার (১৮ নভেম্বর) শেষ রাত থেকে সকাল নাগাদ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে এটি কখন আঘাত হানবে তা এর বডির গতির ওপর নির্ভর করে।’
এটি খুলনা ও বরিশালের মাঝখান দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, তবে এটি যে কোন সময় গতিপথ পরিবর্তনও করতে পারে।
‘এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে মিধিলি। এটি একটি সাধারণ সাইক্লোন হবে। এটি খুব দ্রুত ঘনীভূত হয়েছে। অল্পসময়ের মধ্যে লঘুচাপ থেকে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এবং এটি এগোনোর গতিও বেশি। শুক্রবার সকালের মধ্যে এটি ঘূর্ণিঝড়ের পরিণত হলে, পরবর্তী ১৮ ঘণ্টার মধ্যে তা উপকূল অতিক্রম করতে পারে।’
আজিজুর রহমান বলেন, ‘গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে সতর্ক সংকেত বাড়বে। সংকেত বেড়ে পাঁচ, ছয়, সাত পর্যন্ত যেতে পারে।’
আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা জাগো নিউজকে বলেন, ‘গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেবে, আপাতত আমরা সেটি দেখতে পাচ্ছি। কারণ এটি আরও ঘনীভূত হবে। এ বিষয়ে তথ্য বিশ্লেষণ চলছে, দুপুরের পর অনেক কিছু স্পষ্ট হয়ে যাবে।’
অন্যদিকে, ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে শুক্রবার সকাল নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এটি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে শনিবার ভোর নাগাদ এটি বাংলাদেশের মোংলা এবং খেপুপাড়ার মধ্যদিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। উপকূল অতিক্রমের সময় এর গতি থাকতে পারে ৫৫ থেকে ৬৫ কিলোমিটার, যা ঝোড়ো হওয়ার আকারে সর্বোচ্চ ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর নাম হবে ‘মিধিলি’। নামটি মালদ্বীপের দেওয়া, যার অর্থ ‘ফলপ্রসূ কোন বিষয়’ বলে জানান একজন আবহাওয়াবিদ।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) অধীন জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের ১৩ দেশের (বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, সৌদি আরব ও ইয়েমেন) আবহাওয়াবিদদের সংস্থা এস্কেপ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়ে থাকে।
সাড়ে ৬০০ কিমি দূরে, ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত : গভীর নিম্নচাপটি বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশের উপকূল থেকে সাড়ে ৬০০ কিলোমিটারের মতো দূরে ছিল। এর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর উপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) সকালে আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত নিম্নচাপটি উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এটি আজ (১৬ নভেম্বর ২০২৩) সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৫৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
হতে পারে ভারী বৃষ্টি : গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ছাড়াও মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার দেশের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।
বুধবার রাতে ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাকার আকাশ মেঘলা।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝোড়ো হওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

এ সময় সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।

শনি এবং রবিবারও বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর