শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪০ অপরাহ্ন

টাঙ্গাইলে পাহাড়ী গড়ের লালমাটিতে খেজুরের রস ও চাটিগুড়ের অপার সম্ভাবনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: / ৩৪৩ Time View
Update : সোমবার, ২৯ জানুয়ারী, ২০২৪

জেলার মধুপুর পাহাড়ী গড় এলাকার লালমাটিতে খেজুরের রস ও চাটিগুড়ের অর্থনৈতিক অপার সম্ভাবনা উকি দিচ্ছে।
শীতের তীব্রতা জেঁকে বসেছে। শীতের আমেজে পিঠাপুলির ধুম পড়েছে। খেজুরেররস সংগ্রহ ও গুড় তৈরিতে চলছে গাছিদের ব্যস্ততা। অনেকেই মৌসুম চুক্তিতে খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করছে। গাছি আর কারিগররা খেজুরগুড় বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছে।

এই খেজুরগুড় গুনে-মানে ভালো থাকায় চাহিদাও বাড়ছে। আশপাশের উপজেলা, জেলা থেকে গুড় কিনতে আসছে লোকজন। চিকিৎসকরা বলছে খেজুর রস ও গুড় মানবদেহের জন্য উপকারি। তবে নিপা ভাইরাস থেকে সবার সাবধানে থাকা প্রয়োজন।
পাহাড়ী গড় এলাকার আনারসের মতো খেজুরেররস ও চাটিগুড়ের অর্থনৈতিক অপার সম্ভাবনা হতে পারে। হতে পারে গুড়ের জন্য বিখ্যাত এলাকা। মধুপুরের লালমাটি কৃষি ফসলের জন্য উর্বর উপযোগী থাকায় ধারণা করা হচ্ছে এ অঞ্চলে হতে খেজুরের চাষ। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর চাষ হলে মধুপুর গড় খেজুরের রস ও গুড়ের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠবে এমনটাই ধারনা সংশ্লিষ্টদের।

টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ে আনারসের রাজধানীতে চলছে খেজুরের রস সংগ্রহ আর গুড় তৈরি। কুয়াশা ঢাকা ভোরে মাটির হাড়িতে ভরছে লালমাটির খেজুরের টপটপে রস। কাঁধে নিয়ে ছুটছেন রসেরহাড়ি। বড় কড়াইয়ে কাঁচা রস ঢেলে আগুনে জাল করছেন শীতের সকালে। আগুনের তাপে জলীয় বাষ্পে ঘন হচ্ছে রসের কড়াই। চারপাশ ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়েছে। যতই সময় ঘনিয়ে আসছে দেখা দিচ্ছে ঘন রসের ঝোলাগুড়।

এ যেন গাছি আর কারিগরের হাতের যাদু। কাঠের যন্ত্রের ঘর্ষনে বেড়িয়ে আসছে গুড়। মাটির চাটির উপরে কালো পলি বিছিয়ে ঢেলে দিচ্ছে গরম সিদ্ধ রসের ঘন ছানা। একটু পরেই জমাট বেঁধে রূপ নেয় গুড়ে। দারুন রঙ আর পরিবেশ সম্মত উপায়ে তৈরি হচ্ছে খেজুর গুড়। মেডিসিন কেমিক্যাল না দেওয়ায় মধুপুরের পাহাড়িয়া এলাকার পিরোজপুর গ্রামের তৈরিকৃত এ গুড়ের চাহিদা বেড়েই চলছে। প্রতিকেজি গুড় সাড়ে চারশ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। গুড় কিনতে আশপাশের উপজেলা থেকে আসছে লোকজন।

পাহাড়ী গড় এলাকার আনারসের বাগান, বিল, বাইদ ও পুকুর পাড়ের বিভিন্ন খেজুর গাছের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করতে উত্তরবঙ্গ থেকে আসছেন গাছিরা। তারা চুক্তি ভিত্তিক গাছ নিয়ে গুড় তৈরি করছে। লালমাটির সুমিষ্ট গুড় নিয়ে গ্রামে চলছে পিঠাপুলি খাওয়ার ধুম। পুরো শীত চলবে গুড় তৈরি এমনটাই জানালেন গাছিরা।

পিরোজপুর গ্রামের জোয়াহের আলী (৫৫) জানান, অন্যান্য জেলার গুড়ের চেয়ে লালমাটির গুড় স্বাদে গুনে ঘ্রাণে আলাদা। ভেজাল মুক্ত হওয়ায় স্থানীয়দের চাহিদা বেড়েছে। এমন গুড় পেয়ে খুশি স্থানীয়রা। গুনে-মানে ভালো থাকায় দিন-দিন আসছে দুর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা।
তারা মিয়া ৪৫) জানান, তার ১৫ টি খেজুর গাছ এ বছর রস সংগ্রহের জন্য গাছিদের কাছে চুক্তি ভিত্তিক দিয়েছে। ভালো রস আসছে। এ রস নিয়ে গাছিরা তাদের গ্রামে গুড় তৈরি করছে। প্রতিকেজি গুড় সাড়ে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আবুল হোসেন (৫৪) জানান, বাজারে গুড়ের চেয়ে তাদের এলাকার তৈরিকৃত গুড় গুণেমানে স্বাদে গন্ধে অনেক ভালো। এজন্য দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন গুড় কিনতে আসছে। খেজুরেররস ও গুড় তৈরির কারিগর মহসিন মিয়া (৫০) জানান, রাজশাহী থেকে টাঙ্গাইলের মধুপুরে গাছ কাটতে এসেছি। এই জেলায় আমরা ১২ বছর ধরে শীত মৌসুমে গাছ কেটে রস সংগ্রহ ও রস থেকে গুড় তৈরি করি। খেজুরের রস অনেক ভালো। আমাদের সংগ্রহ করা রস ও গুড়ের মান ভালো থাকায় এর চাহিদা বেশি। তার মতে, মধুপুরের খেজুরের রসের গুণগত মান অনেক ভালো।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান বলেন, খেজুর রসে উপকারিতা আছে, আবার তেমনভাবে ক্ষতিও আছে। নিপা ভাইরাসের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষার জন্য পরিমিত তাপমাত্রায় সিদ্ধ করে খেতে হবে।
কালের পরিক্রমায় খেজুর গাছ দিন-দিন কমে যাচ্ছে। শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে রসের পরিমাণ মোটামুটি ভালো পাচ্ছে। আহরিত রসের খেজুরের গুড় পেয়ে খুশি আনারসের জনপদের মানুষেরা। যদি আনারসের মতো খেজুরের চাষ করা যায়, তবে আনারসের মতো খেজুর গুড়েরও সুনাম ছড়িয়ে পড়বে দেশ ও বিদেশে এমনটাই আশা স্থানীয়দের।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর