সংঘাত ও জলবায়ু বিপর্যয়ের দুষ্টচক্রে বন্দি লাখো শরণার্থী : জাতিসংঘ
Update Time :
Tuesday, November 11, 2025
/
34 Time View
/
Share
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সংঘাত ও জলবায়ু বিপর্যয়ের দুষ্টচক্রে লাখ লাখ শরণার্থী আটকা পড়েছে বলে সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটি আগামী বছর অনুষ্ঠেয় জলবায়ু সম্মেলনে (কপ৩০) বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এই জনগোষ্ঠীর অর্থায়ন নিশ্চিত করারও আহŸান জানিয়েছে।
জেনেভা থেকে এএফপি এখবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, আগামী ১৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া দেশগুলো জলবায়ুজনিত চরম ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন শুধু বিদ্যমান ঝুঁকিই বাড়াচ্ছে না, নতুন বাস্তুচ্যুতির ধারা সৃষ্টি করছে। ফলে শরণার্থীদের জন্য জটিল ও বহুমাত্রিক ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। তারা এর প্রভাব থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পাচ্ছে না।
ইউএনএইচসিআর বলেছে, ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে যুদ্ধ, সহিংসতা ও নিপীড়নের কারণে ১১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। যার প্রতি চারজনের তিনজনই এমন দেশে বাস করছে, যেগুলো জলবায়ুজনিত বিপর্যয়ের উচ্চ বা চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গত এক দশকে আবহাওয়া-সংক্রান্ত দুর্যোগের কারণে দেশভিত্তিক অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে প্রায় ২৫ কোটি মানুষের। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া ঘরবাড়ি ও জীবিকা ধ্বংস করছে। যারা একবার সহিংসতা থেকে পালিয়েছে, তাদের অনেকে আবারও পালাতে বাধ্য হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই মানুষগুলোর ইতোমধ্যেই অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এখন আবারও একই দুর্ভোগ ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হচ্ছেন তারা। ভয়াবহ খরা, প্রাণঘাতী বন্যা এবং রেকর্ড ভাঙা তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এই মানুষগুলো ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতায় সবচেয়ে কম। ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে গাম্বিয়া, ইরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, সেনেগাল ও মালির ১৫টি শরণার্থী শিবিরে সবচেয়ে বেশি গরম পড়বে। বছরে প্রায় দুশো দিনই বিপজ্জনক মাত্রার তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে ওইসব এলাকায়। তীব্র গরম ও অতিরিক্ত আর্দ্রতার প্রাণঘাতী সংমিশ্রণে এসব এলাকা ভবিষ্যতে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ুজনিত চরম ঝুঁকিতে থাকা দেশের সংখ্যা বর্তমানে ৩টি হলেও ২০৪০ সালের মধ্যে তা ৬৫-এ পৌঁছাতে পারে। এই ৬৫টি দেশ বর্তমানে সংঘাতে বাস্তুচ্যুতদের ৪৫ শতাংশেরও বেশি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিয়েছে। একসময় ইউএনএইচসিআর-এর বাজেটের ৪০ শতাংশেরও বেশি সরবরাহ করত ওয়াশিংটন। এছাড়া, অন্য দাতাদেশগুলোও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যয় সংকোচন করেছে।
ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, ‘অর্থায়ন কমে যাওয়ায় আমরা আবহাওয়ার চরম প্রভাব থেকে শরণার্থী ও বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে পারছি না। ভবিষ্যত বাস্তুচ্যুতি রোধে টিকে থাকার লড়াই করা জনগোষ্ঠীর হাতে জলবায়ু অর্থায়ন অবশ্যই পৌঁছাতে হবে। কপ৩০-কে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, ‘এই সম্মেলন থেকে ফাঁকা প্রতিশ্রæতি নয়, বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবেশগত অবক্ষয়ের মুখে থাকা শরণার্থী আশ্রয়দাতা অঞ্চলগুলোতে টেকসই অর্থায়নের মাধ্যমে পরিবেশ পুনরুদ্ধার উদ্যোগ কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্থানীয় জনগণের জলবায়ু সহনশীলতা বাড়ানো যেতে পারে।