মো. আবুল কালাম : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ২০২৬ সালে জাতীয় নির্বাচন দেখতে হলে আগে জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি লাগবে। আর এর জন্যই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। আমরা ভদ্র ভাষায় বলছি এবং বলবোই। তবে দাবি আদায়ের ব্যাপারে হিমালয়ের মতো অটুট থাকবো। কারণ এটি বিপ্লবের দাবি। ফ্যাসিবাদের দাবি নয়। সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর পল্টনে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে আট দলের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দুপুর ২টায় শুরুর কথা থাকলেও সকাল থেকেই রাজধানী ও আশপাশের জেলা থেকে মিছিল সহকারে সমাবেশ মঞ্চের আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন ¯েøাগান দেন। সমাবেশের বিস্তৃতি পশ্চিমে জাতীয় প্রেসকাব, পূর্বে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট, উত্তরে কাকরাইল মোড় ও দেিণ মুক্তাঙ্গন পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টির আমির সারোয়ার কামাল আজিজী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)’র সহ সভাপতি রাশেদ প্রধান ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক চান। জামায়াতের আমির বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের দুর্বার আন্দোলন চলবে। তাই সরকারকে জনগণের ভাষা বুঝে আগে গণভোট দিতে হবে। গণভোট আর জুলাই সনদের গোড়াপত্তন কখন হবে মানুষ জানতে চায়। এ ব্যাপারে মুক্তকামী জনগণসহ বেশিরভাগ মানুষ একমত। তিনি প্রশ্ন রাখেন- তাহলে গণভোটের তারিখ নিয়ে এত বায়নাবাজি কেন? ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বেশিরভাগ বিষয়ে একমত হয়েই তো আমরা সনদে স্বার করেছি। তখন গণভোট আগে হওয়াই তো যুক্তিযুক্ত। এর মধ্য দিয়েই আইনি ভিত্তির পাটাতন তৈরি হবে। হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। তখন আর কোনো সন্দেহ ও সংশয় থাকবে না। তিনি বলেন, আমরা চাই আগামী ফেব্রæয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন হোক। এ নিয়ে কেউ ধূম্রজাল সৃষ্টি করবেন না। তিনি অভিযোগ করেন কেউ কেউ ঐকমত্য কমিশনে এক হয়েও জুলাই সনদকে অশ্রদ্ধা করছেন। তাহলে তারা গণতন্ত্রের প্রতি কীভাবে শ্রদ্ধা দেখাবেন? তাদের প্রতি অনুরোধ জনগণের ভাষা কান পেতে শোনার চেষ্টা করুন। অন্যথায় নিজেদের পরিণতির জন্য অপো করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে আইনি ভিত্তি দেয়ার ব্যাপারে সবাই একমত পোষণ করেছে। এখন গণভোট আগে না হলে জাতীয় নির্বাচন করবেন কোন আইনে? গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ আইনি ভিত্তি পেলেই জাতীয় নির্বাচনও আইনি ভিত্তি পাবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ভারতে পালাতে পেরেছে। নতুন করে যারা ফ্যাসিবাদী হতে চাইছেন তারা পালাবেন কোথায়? বঙ্গোপসাগরে যাওয়া ছাড়া তাদের যাওয়ার উপায় নেই। বিএনপির কথায় একই দিনে গণভোট দেয়ার পাঁয়তারা যারা করছে, তাদের মতলব জনগণ জানে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত। এক প বাহাত্তরের সংবিধান, আর অন্যপে জুলাইয়ের প।ে তাই আমাদের সবাইকে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। ১৩ নভেম্বর কেউ নামতে চাইলে তাদেরকে রাজপথে মোকাবিলা করতে হবে। জুলাই সনদকে কোনো কাগজের সনদ হিসেবে দেখতে চাই না। তাই সরকারের আদেশে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে জনগণ মানবে না। জুলাই চেতনার বাইরে বাংলার মাটিতে অন্য কিছু বাস্তবায়ন হতে দেবো না। খেলাফত মজলিসের আমির অধ্য মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ বলেন, নির্বাচনের আগেই গণভোট করতে হবে। এটা দেশের সর্বস্তরের মানুষের দাবি। এটি নভেম্বরের মধ্যেই করতে হবে। বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টির আমির অধ্য সারোয়ার কামাল আজিজী বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে পাঁচ দফা দাবি আদায় করবো। এতে ইসলামি সরকার গঠন হবে। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজি বলেন, আগামী সরকার যেন ইসলামি হয়। তিনি বলেন গণভোট এদেশে নতুন কিছু নয়। একটি দলেরও জন্ম হয়েছে গণভোটের মাধ্যমে। তাই গণভোট নিয়ে তাদের ভয় পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। জাগপার সহ সভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, একটি দল যাদের জন্ম গণভোটের মাধ্যমে, তারা আজ গণভোটে রাজি হচ্ছে না। তারা জনগণের চাপে মানলেও জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট চাচ্ছে। আমরা এর মাধ্যমে জুলাই সনদকে অপমান হতে দিবো না। বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেন, বিগত দিনে মজলুম ছিলেন, তাই নতুন করে জালেম হবেন না। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক চান বলেন, একটি দল জুলাই সনদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে জনগণের মন থেকে উঠে গেছে। আপনারা মানুষের ভাষা না বুঝলে জনগণ আপনাদের ছাড়বে না। আরও বক্তব্য রাখেন- জামায়াতের সেক্রেটারি মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমাদ, সিনিয় প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদ, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউসুফ সাদেক হাক্কানী, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব জাহাঙ্গীর হোসাইন।
গণভোট ছাড়া নির্বাচনের বৈধতা আসবে না: গোলাম পরওয়ার : জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে পাঁচ দফা গণদাবির আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হওয়ার আহŸান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম মিয়া পরওয়ার। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ঐতিহাসিক পল্টন মোড়ে আটটি ইসলামী দলের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এই দাবি জানান। তিনি বলেন, সাংবিধানিক সংস্কারসমূহের আইনি ভিত্তি কেবলমাত্র গণভোটের মাধ্যমেই সম্ভব। অন্যথায় জাতীয় নির্বাচনের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে গণভোটের মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদানসহ পাঁচ দফা গণদাবিই আজকের এই জনসমাবেশের মূল উদ্দেশ্য। গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, সরকারের ঐকমত্য কমিশন প্রায় নয় মাস ধরে সাংবিধানিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় নানা সংস্কারের বিষয়ে প্রায় একমত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- দলের প্রধান ও সরকারের প্রধান এক না থাকা, সাংবিধানিক পদগুলোয় পৃথক নিয়োগ কর্তৃপ গঠন ইত্যাদি। এসব সংস্কার সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও সমর্থন করেছেন। এই সংশোধনগুলো যদি আইনি ভিত্তি না পায়, তাহলে কিসের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন হবে? একমাত্র গণভোটের মাধ্যমেই জাতির আকাঙ্া পূরণের জন্য গৃহীত সংস্কারগুলোর আইনি ভিত্তি দেওয়া সম্ভব। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রæয়ারির নির্বাচনের জন্য ঐকমত্য তৈরি হওয়ার মুহূর্তে একটি মহল ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। ১৩ নভেম্বর নতুন নাশকতার পরিকল্পনার বিষয়ে সরকারকে সতর্ক করে তিনি বলেন, আজকের এই সমাবেশ দিল্লির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধেও এক প্রতিবাদ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে পরওয়ার আরও বলেন, আমরা শুনছি, বিভিন্ন হোটেলে সন্ত্রাসীরা অবস্থান নিয়েছে। আপনারা অবিলম্বে অভিযান চালিয়ে ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোসরদের গ্রেপ্তার করুন। গোলাম পরওয়ার বলেন, অবিলম্বে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে গণভোটের আয়োজন করা হোক এবং এর পরপরই ফেব্রæয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হোক। মানবতাবিরোধী অপরাধী ও খুনিদের বিচারের দাবিকে সমর্থন জানিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, নভেম্বরে কয়েকজন অপরাধীর রায় ঘোষণার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় ফ্যাসিস্ট চক্র নতুন করে নাশকতার ষড়যন্ত্র করছে।
গণভোট না হলে ২০২৯ সালে সংসদ নির্বাচন: আযাদ: জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী গণভোট না হলে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ২০২৯ সালে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর পল্টন মোড়ে আট দলের সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সংবিধান অনুযায়ী গণভোট ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। কেউ কেউ বলছেন সংবিধানে গণভোটের বিধান নেই। তাদের বলতে চাই, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধান সংশোধন করে গণভোটের ধারা বাতিল করেছিলেন শেখ হাসিনা। এখন যারা বলেন সংবিধানে গণভোট নেই, তারা কি তাহলে হাসিনার সুরে কথা বলেন না? তিনি আরও বলেন, সংবিধানে পাঁচ বছর পরপর নির্বাচনের কথা লেখা আছে। ২০২৪ সালে যদি নির্বাচন হয়, তাহলে ২০২৬ সালে নির্বাচন হবে-সেটা কোথায় লেখা আছে? সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হতে হবে ২০২৯ সালে। জামায়াতের এই নেতা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সমাজকে নতুন ভিত্তিতে শক্তিশালী করতে এবং নতুন বাংলাদেশের পথে যাত্রা শুরু করতে হলে জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্কারের অংশ হিসেবে গণভোট দিতে হবে। নির্বাচনের আগে গণভোট ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়নও হবে না, সুষ্ঠু নির্বাচনও সম্ভব নয়। বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, আপনারা আবার নতুন করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চান।