ডাংগুলি থেকে শুরু করে দেশীয় খেলাধুলার চর্চায় গুরুত্ব দিতে বললেন প্রধানমন্ত্রী
ডাংগুলি থেকে শুরু করে দেশীয় খেলাধুলা চর্চায় গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের দেশীয় খেলাগুলো যেন হারিয়ে না যায়, তার জন্য সবাই মিলে উদ্যোগ নিতে হবে।
আজ বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজশাহীতে ৫২তম শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা মেধাবি। সুযোগ করে দিলে তারা আরও ভালো করতে পারবে। সব ধরনের খেলাকে আমাদের হাতে আনতে হবে। আমাদের কিছু দেশীয় খেলা, সেই ডাংগুলি থেকে শুরু করে, বিভিন্ন খেলাধুলা আগে প্রচলিত ছিল। সেগুলো আমাদের আবার চালু করা উচিত। আমাদের নিজস্ব দেশীয় খেলাগুলো, হাডুডু থেকে শুরু করে সবগুলো খেলা সক্রিয় রাখতে উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের ছেলে-মেয়েরাসহ সবাই মিলে উদ্যোগ নেবেন যেন দেশীয় খেলাগুলো হারিয়ে না যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা নিজেই খেলাধুলার প্রতি অত্যন্ত মনোযোগী ছিলেন। আমি মনে করি, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলার ব্যাপক সুযোগ পাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পর্যন্ত তাদের দক্ষতা প্রমাণ রাখতে পারছে। জাতির পিতার উদ্যোগে স্বাধীনতার পর এই শীতকালীন জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল। আমাদের পরিবার সবসময় খেলাধুলার সঙ্গে জড়িত ছিল। আমার দাদা নিজেই ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন, আমার বাবাও ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন এবং আমার ভাই জামাল, কামাল, রাসেল সবাই স্পোর্টসের সঙ্গে জড়িত ছিল। এমনকি কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লু উপাধি পেয়েছিল। জামালের স্ত্রী পারভীন জামালও খেলাধুলার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। খেলাধুলার উন্নতি করাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়ের নাতিপুতিটাও ফুটবল খেলে। ফুটবল হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা, তার সঙ্গে আমাদের দেশীয় অন্যান্য খেলাধুলাও বেশি আকর্ষণ করে গড়ে তোলা উচিত। দেশীয় খেলাকেও গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। খেলাধুলার মধ্য দিয়ে শারীরিক চর্চা হয়, খেলাধুলার মধ্য দিয়ে বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকে ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি হয়। প্রতিযোগিতার পাশাপাশি বন্ধুত্বের একটা সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। সে কারণে খেলার প্রতি আরও দৃষ্টি দেওয়া উচিত। আমরা সরকার গঠনের পর থেকে খেলাধুলার প্রতি আরও মনোযোগী হয়েছি। যে কারণে প্রাইমারি স্কুলে মেয়েদের বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট, ছেলেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু করি। পাশাপাশি আন্তঃস্কুল প্রতিযোগিতা যেমন শুরু হয়েছে। শুধু ফুটবল ক্রিকেট না, সব ধরনের খেলাধুলার দরকার। আন্তঃস্কুল, আন্তঃকলেজ, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয়ে খেলাধুলার প্রতিযোগিতা গড়ে তোলা দরকার। তাহলে খেলাধুলার মধ্যে আমাদের ছেলেমেয়েদের যেমন শরীর চর্চা হবে, মন-মানসিকতার উন্নতি ঘটবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েদের আরও উন্নত প্রশিক্ষণ দরকার। সেজন্য প্রশিক্ষক তৈরি করা একান্তভাবে দরকার। আমরা প্রত্যেকটা বিভাগে একটি করে ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবো, বিকেএসপি আটটা বিভাগে আটটা হবে। যেখানে আমাদের ছেলে-মেয়েরা ছোটবেলা থেকে খেলাধুলায় আরো পারদর্শী হবে। আজকে আমাদের ভালো খবর হলো যে ভুটানকে আমরা চার গোলে হারিয়েছি। ফুটবলে আমাদের মেয়েরা খুব ভালো করছে। খেলাধুলার দিক দিয়ে মেয়েরা একটু বেশি এগিয়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে, ছেলেরা পিছিয়ে নেই তবে আরও এগিয়ে যাবে। ছোটবেলা থেকে যদি ভালো ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে তারা তাদের দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবে।
দেশীয় খেলা আরও গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা প্রত্যেকটা উপজেলা পর্যন্ত খেলার মাঠ, মিনি স্টেডিয়াম তৈরি করছি। আমাদের বেশ কয়েকটা হয়ে গেছে আরও বাকি আছে। এটা তৈরি করার উদ্দেশ্য হলো আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেন সারা বছর খেলাধুলার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। অনুষ্ঠানটি রাজশাহীর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।