ত্রাণবাহী গাড়ী বহরের কাছে ইসরায়েলি হামলার তদন্তের আহ্বান বিশ্ব নেতাদের
ত্রাণবাহী যানবাহনের কাছে সাহায্যের জন্য মরিয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি হামলায় কয়েক শতাধিক হতাহতের পর বিশ্ব নেতারা প্রায় পাঁচ মাস ধরে চলমান গাজা যুদ্ধের তদন্ত এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন।
ক্রমবর্ধমান মানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় ‘আরো কিছু করার’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজায় বিমান থেকে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করবে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মিত্র ইতোমধ্যেই দুর্গত বিপজ্জনক এলাকায় সহায়তা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ত্রাণবাহী ট্রাকের কাছে খাদ্যের জন্য মরিয়া ফিলিস্তিনিরা বিশৃঙ্খলভাবে ঝাঁপিয়ে পড়লে ইসরায়েলি সৈন্যরা গুলি চালায়। হামাস পরিচালিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এই হামলায় ১২৩ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এক কর্মকর্তা সতর্ক করার পরেও এই মৃত্যু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির যদি কোন পরিবর্তন না হয় উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষ আসন্ন।’
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, হাজার হাজার গাজাবাসী ৩৮টি ত্রাণবাহী ট্রাকের বহরকে ঘিরে ফেললে একটি ‘বিশৃংখল’ পরিস্থিতিতে কয়েক শতাধিক লোক মারা যায় এবং অনেকে আহত হয়। এদের মধ্যে কয়েকজন ট্রাকে চাপা পড়ে।
ইসরায়েলি একটি সূত্র স্বীকার করেছে, এই ভিড় হুমকি তৈরি করছে-এমন ধারণা থেকে সৈন্যরা ভিড়ের উপর গুলি চালিয়েছিল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এটিকে একটি ‘গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে ১২৩ জন নিহত এবং ৭শ’ ৫০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
জাতিসংঘ প্রধান আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র বলেছেন, শুক্রবার গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে কিছু আহতদের দেখতে গিয়ে একটি প্রতিনিধিদল ‘বিপুল সংখ্যক গুলিবিদ্ধ আহত’ লোকদের দেখেছেন।
মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেছেন, হাসপাতাল ৭০ জনের মৃতদেহ গ্রহণ করেছে এবং ৭শ’ জনেরও বেশি আহতদের চিকিৎসা করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ২শ’ জন এখনও দলটির পরিদর্শনের সময় সেখানে ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি না যে আমাদের দল নিহত ব্যক্তিদের মৃতদেহ পরীক্ষা করেছে কি-না। যারা জীবিত চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের পরিপ্রেক্ষিতে তারা যা দেখেছেন তা থেকে আমার উপলব্ধি হল যে, বিপুল সংখ্যক গুলিবিদ্ধ হয়েছে।’
ভূখন্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সর্বশেষ হিসেব অনুসারে, ত্রাণবাহী গাড়ির মৃত্যুর ঘটনায় গাজায় যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০,২২৮। যাদের বেশিরভাগই মহিলা এবং শিশু।
ইসরায়েল জানায়, গত ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে গাজাযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। হামাসের ওই হামলায় ১,১৬০ জন নিহত হয়েছিল। যার বেশিরভাগই বেসামরিক লোক।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী বলেছে, অক্টোবরের শেষের দিকে স্থল অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ২৪২ সেনা নিহত হয়েছে।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবক সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ লিখেছেন, ‘ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে তদন্ত করতে হবে যে কীভাবে ব্যাপক আতঙ্ক ও গুলিবর্ষণ ঘটতে পারে।’
তার ফরাসি সমকক্ষ স্টিফেন সেজার্ন বলেছেন: ‘কী ঘটেছে তা নির্ধারণের জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে’।
এদিকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লেইন বলেছেন, যা ঘটেছে তা তদন্ত করতে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো উচিত’।