স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক : চোরাগোপ্তা হামলা, নাশকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ
কোটা সংস্কারের দাবিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনের সময় সহিংসতা ও তাণ্ডবের পেছনে কাজ করেছে বিএনপি ও জামায়াত। এখন জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে আবারও মাঠে নামতে পারে এ সংগঠন। এমনকি প্রজ্ঞাপন জারির পর তারা মরণ কামড়ও দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ অবস্থায় চোরাগোপ্তা হামলা ও নাশকতা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, চার সচিব ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার পর কী ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, তা নিয়ে দীর্ঘসময় আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চোরাগোপ্তা হামলার আশঙ্কা করা হয়েছে। তাই যে কোনো নৈরাজ্য প্রতিরোধে আজ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সহিংসতার মামলা, গ্রেপ্তার, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফেরানো, কারফিউ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, জামায়াতের কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। মন্ত্রী ও সচিবরা যার যার মন্ত্রণালয় নিয়ে কথা বলেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে অবহিত করেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা সভায় জানান, জামায়াত ও শিবিরের সব ধরনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করলে দলটির নেতাকর্মীর বিশৃঙ্খলা করার আশঙ্কা রয়েছে। তারা চোরাগোপ্তা হামলাও চালাতে পারে। এ জন্য পুলিশ, র্যা ব, বিজিবি ও আনসারের টহল বৃদ্ধি করতে হবে।
বৈঠকে আরও বলা হয়, ঢাকা মহানগরসহ পুলিশের সব ক’টি ইউনিটকে সতর্ক থাকতে হবে। যারা সহিংসতার সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের যেভাবেই হোক আনতে হবে আইনের আওতায়। তবে কোনো নিরাপরাধ লোক যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে মত দেন সবাই।
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকাল বিকেলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে বিশেষ বৈঠক শুরু হয়। দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক চলে। বৈঠকের মাঝে জরুরি কাজে বের হয়ে যান তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। এ সময় তিনি বলেন, কোটা আন্দোলনকে হাতিয়ার বানিয়ে জঙ্গিদের গণভবন ও বিমানবন্দরে হামলার পরিকল্পনা ছিল। কীভাবে তারা পরিকল্পনা করে জঙ্গি আক্রমণ করেছে, এসব বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আজ বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত চার দিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। ঢাকা মহানগর, ঢাকা জেলা, গাজীপুর মহানগর ও জেলা, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় এটা কার্যকর হবে।
সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনেকেই বলছেন, আমরা গণগ্রেপ্তার করছি। কোনো গণগ্রেপ্তার আমরা করছি না। এমন কোনো জেলা নেই, যেখানে ধ্বংস না করলেও, তারা নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেনি। গোয়েন্দা তথ্য, ভিডিও ফুটেজ, সাক্ষী নিয়ে যাদের আমরা শনাক্ত করতে পেরেছি, তাদেরই গ্রেপ্তার করছি। ভুলক্রমে যদি কাউকে নিয়ে আসেন থানায় আমাদের কর্মকর্তারা; তাদের চেক করে যদি মনে করেন, তিনি নিরপরাধ– তাকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে ধাপে ধাপে
সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী জানান, বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধাপে ধাপে খুলে দেওয়া হবে। জননিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমরা সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ধাপে ধাপে অবশ্যই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে চাই। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য যে বিদ্যালয়গুলো আছে, পরবর্তী সময়ে মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকি নিরূপণের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে।
ফেসবুক, টিকটকসহ কবে খুলবে জানা যাবে আজ
ফেসবুক, টিকটকসহ বন্ধ থাকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো কবে নাগাদ খুলবে, আজ জানা যাবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সভা শেষে তিনি বলেন, আমরা টিকটক, ইউটিউব এবং ফেসবুককে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য মৌখিক এবং লিখিতভাবে উত্তর দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। সেখানে টিকটক জবাব দিয়েছে। তারা বলেছে, আগামীকাল (আজ) তারা উপস্থিত হয়ে লিখিত এবং মৌখিকভাবে জবাব দিতে চায়। ফেসবুক এবং ইউটিউবের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বিটিআরসিতে তারা কোনো উত্তর দেয়নি।