মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় বাগেরহাটের ৯ জনের রায় পিছিয়েছে
ডেস্ক রিপোর্ট : মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক দুই আসামির মৃত্যুর খবরে বাগেরহাটের ৯ জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা পিছিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল আজ এ আদেশ দেয়। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম।
মামলায় বাগেরহাটের খান আকরামসহ নয়জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন নির্ধারিত ছিলো। রায় ঘোষণার আগে আজ জানানো হয় যে এই মামলার দুইজন আসামি মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একজনের তথ্য জানানো হয়েছে। মারা যাওয়া অপর আসামীর বিষয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য আদালত রায় ঘোষণা না করে এ বিষয়ে দিন ধার্য করার জন্য আদেশের দিন ঠিক করেছেন। এ বিষয়ে আগামী ৩০ নভেম্বর পরবর্তী আদেশ দিবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাব্যুনাল।
প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন জানান, সকালে ডিফেন্সপক্ষ থেকে জানায় এ মামলায় পলাতক দুইজন আসামি মারা গেছে। এর মধ্যে একজনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তা দাখিল করা হয়েছে। অপরজনেরটা পাইনি। এই জন্য রায় পেছানো। পুলিশের কাছে গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকে। ওনারা তদন্ত করে এ বিষয়ে রিপোর্ট পাঠায়। সেটা আমরা দাখিল করি।যেহেতু দুইজন আসামি মারা গেছেন, তাহলে তাদেরকে তো মামলা থেকে বাদ দিতে হবে। এই কারণে আদালত রায়ের তারিখ পিছিয়ে আদেশের জন্য ৩০ নভেম্বর দিন রেখেছেন।
প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।তিনি বলেন, মামলায় মোট ৯ আসামীর মধ্যে পলাতক ছয়জন।এর মধ্যে দুইজন মারা গেছেন বলে জানান তিনি। তাদের মধ্যে আসামী সুলতান আলী খান ২০১৯ সালের ৬ মে মারা গেছেন তথ্য পাওয়া গেছে। অপর আসামী কবে মারা গেছেন সেই তথ্য জানানোর জন্য বলেছেন আদালত। ওই তথ্য জানার পর কবে রায় ঘোষণা করা হবে তা আগামী ৩০ শে নভেম্বর দিন ঠিক করবেন ট্রাইব্যুনাল।
এরআগে গত মঙ্গলবার ৭ নভেম্বর আজ রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ঠিক করে আদেশ দেয়া হয়। এ মামলায় বর্তমানে ৯ আসামির মধ্যে ছয় জন পলাতক ছিলেন। কারাবন্দি তিন আসামি হলেন- খান আকরাম হোসেন, শেখ মো. উকিল উদ্দিন ও মো. মকবুল মোল্লা।
আসামিদের বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ: এক নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ২৬ মে ১৫/২০ জন রাজাকার ও ২৫/৩০ জন পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর সদস্যসহ বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানাধীন চাপড়ী ও তেলিগাতীতে নিরীহ নিরস্ত্র মুক্তিকামী মানুষদের ওপর অবৈধভাবে হামলা চালিয়ে ৪০/৫০টি বাড়ির সমস্ত মালামাল লুণ্ঠন করে, বাড়িঘর অগ্নিসংযোগে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে, দুইজন নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম করে এবং ১০ জন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের মানুষকে গুলি করে হত্যা করে।
দুই নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৭ জুলাই আসামিরা বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন হাজরাখালী ও বৈখালী রামনগরে হামলা চালিয়ে অবৈধভাবে নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের চারজন লোককে আটক ও অপহরণ করে আবাদের খালের ব্রিজে হত্যা করে লাশ খালে ফেলে দেয়।
তিন নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানাধীন ঢুলিগাতী গ্রামে হামলা চালিয়ে দুইজন নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে অবৈধ আটক, নির্যাতন ও গুলি করে হত্যা করে।
চার নম্বর অভিযোগ : ১৯৭১ সালের ১৭ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন বিলকুল ও বিছট গ্রামে হামলা চালিয়ে চারজন নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতার পক্ষের লোককে আটক ও অপহরণ করে কাঠালতলা ব্রিজে এনে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়।
পাঁচ নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন বিলকুল গ্রাম থেকে নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আলী নকীবকে অন্যায়ভাবে আটক ও অপহরণ করে মোড়লগঞ্জ থানার দৈবজ্ঞহাটির গরুর হাটির ব্রিজের ওপরে নিয়ে নির্যাতন করার পর গুলি করে হত্যা করে।
ছয় নম্বর অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৬ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন উদানখালী গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ নিরস্ত্র উকিল উদ্দিন মাঝিকে অবৈধভাবে আটক করে হত্যা করে এবং তার মেয়ে তাসলিমাকে অবৈধভাবে আটক ও অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসে। কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পে দীর্ঘদিন অবৈধভাবে সলিমাসহ চারজনকে আটকিয়ে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। ১৬ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় বাংলাদেশ দখলদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্প তল্লাশি করে ভিকটিম তাসলিমাকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে পৌঁছে দেন।
সাত নম্বর অভিযোগ: বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানাধীন গজালিয়া বাজারে হামলা চালিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরীহ নিরস্ত্র শ্রীধাম কর্মকার ও তার স্ত্রী কমলা রানী কর্মকারকে অবৈধভাবে আটক করে নির্যাতন করতে থাকে। আসামিরা শ্রীধাম কর্মকারকে হত্যা করে কমলা রানী কর্মকারকে জোরপূর্বক অপহরণ করে কচুয়া রাজাকার ক্যাম্পে এনে আটকিয়ে রাখে। উল্লিখিত আসামিসহ কচুয়া রাজাকার ক্যাম্প ও আশেপাশের রাজাকার ক্যাম্পে কমলা রানী কর্মকারসহ আটক অন্য চারজনকে দীর্ঘদিন রাজাকার ক্যাম্পে আটকিয়ে রেখে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। প্রায় এক মাস শারীরিক নির্যাতনের পর কমলা রানী কর্মকার অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান। সূত্র: বাসস