October 10, 2025, 3:40 pm
শিরোনাম :
ব্রেকিং নিউজ :

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক শৃঙ্খলা না ফেরায় লেগে আছে যানজট

নিজস্ব প্রতিবেদক: যানজট নিরসনে উপদেষ্টার ছয় দফা নির্দেশনার পরও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে এখনো শৃঙ্খলা ফেরেনি। বিশ্বরোড গোলচত্বর এলাকার দুই-তৃতীয়াংশ অটোরিকশা স্ট্যান্ডসহ অবৈধ টংদোকানের দখলে আছে। গতকাল বুধবার রাত থেকে বৃষ্টি হওয়ায় সড়কজুড়ে কাদাপানি। সড়কে শৃঙ্খলার অভাবে যানবাহনগুলো এলোমেলোভাবে চলাচল করছে। গত শনিবার বিকেল থেকে শুরু হওয়া যানজট গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও অব্যাহত ছিল।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান গতকাল সরাইল বিশ্বরোড এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনিও যানজটে আটকা পড়ে গাড়ি ছেড়ে মোটরসাইকেলে চড়ে গন্তব্যে যান। সড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলার অভাবসহ যানবাহনগুলোর এলোমেলো চলাচল তিনিও দেখেছেন। বেহাল সড়ক মেরামত ও যানজট নিরসনে উপদেষ্টা ছয় দফা নির্দেশনা দিলেও শৃঙ্খলা না ফেরায় যানজট দূর হয়নি।

গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে অবস্থান করে দেখা গেছে, তিন স্তরের ইট বিছিয়ে মন্থর গতিতে মেরামতকাজ চলছে। তিন দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার সময় শেষ হয়েছে গত মঙ্গলবার। কাজ অর্ধেক শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে দীর্ঘ যানজট নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে কার্যকর উদ্যোগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর শনিবার বিকেল থেকে সরাইল বিশ্বরোড গোলচত্বর এলাকায় সড়ক মেরামতের কাজ শুরু করে সওজ। গোলচত্বর অংশে ১২ মিটার প্রস্থ এবং ১৮৫ মিটার দৈর্ঘ্য আর গোলচত্বর থেকে সিলেটমুখী সরাইল কুট্টাপাড়া খেলার মাঠ পর্যন্ত ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থে তিন স্তরে ইট ও বালু বিছানো হচ্ছে। ঢাকা, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তৈরি ইট আনা হচ্ছে। আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সওজের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকে সড়কে দেখা যায়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, গোলচত্বরের তিন দিকে মহাসড়কের ওপর সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ড। মহাসড়কের ওপরই যাত্রী ওঠানামা চলছে। এ ছাড়া মহাসড়ক ঘেঁষে বানানো হয়েছে অর্ধশতাধিক ভ্রাম্যমাণ টংদোকান। গোলচত্বর এলাকায় মহাসড়কের ওপরই জেলার অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী বাসগুলো থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা চলছে। পুলিশের বাধা ও নির্দেশনা মানছেন না কেউই।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. আল মামুনকে স্থানীয় বাসগুলোকে মহাসড়কের ওপর থেকে সরিয়ে নিতে ও শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করতে দেখা যায়। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সকাল থেকে বাসসহ অটোরিকশাগুলোকে গোলচত্বর থেকে খানিকটা দূরে নির্দিষ্ট জায়গায় যাত্রী ওঠানামা করানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছি। এখানে কেউ কথা শোনে না। যে যার মতো করে চলতে চায়।’

দুপুর ১২টার দিকে সরাইলের বেড়তলা থেকে বাড়িউড়া পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট দেখা গেছে। এ সময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যানজট কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ও সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই-হবিগঞ্জ সড়কে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়।

সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম গণমাধ্যমকে বলেন, সওজের লোকজন একপাশ বন্ধ করে ধীরগতিতে কাজ করছেন। মেরামতের কাজের জন্য ঢাকা অভিমুখী যানবাহনগুলো ফুটপাত দিয়ে চলাচল করছে। এতে গাড়ি চলতে পারছে না। যানজট লেগে আছে। দুই-এক দিনের মধ্যে মহাসড়কের গোলচত্বরে অটোরিকশা ঢুকতে দেওয়া হবে না।

সওজের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার গণমাধ্যমকে বলেন, টানা বৃষ্টি ও যানজটের কারণে দ্রæত কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। খুব দ্রæত কাজ করতে গেলে যানজট আরও বেড়ে যাবে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এখন থেকে তাঁরা রাতেও কাজ করবেন। আশা করছেন, দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে কাজটি শেষ করা সম্ভব হবে।

সওজ সূত্রে জানা গেছে, ভারতকে ট্রানজিট–সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে ৪ লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হয় ৮ বছর আগে। ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে নেওয়া এ প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। কাজটি বাস্তবায়ন করছে ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড।

গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশি অর্থ ও ভারতীয় ঋণে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ভারতের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা দেশে চলে যান। তিন মাস পর তাঁরা বাংলাদেশে ফিরে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে তাঁদের অনেক মালামাল খোয়া যায়। এতে কাজের গতি আরও কমে যায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবি মেটাতে গত মাসের শেষের দিকে আরও ১৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক