ক্রীড়া সংবাদদাতা: শততম টেস্টে সেঞ্চুরি করে একটি বড় ব্যক্তিগত মাইলফলক স্থাপন করেছেন মুশফিকুর রহিম। আরও একটি মাইলফলক স্থাপনের সুবর্ণ সুযোগ হলো হাতছাড়া।
শততম টেস্টে মুশফিকুর রহিমের সামনে সুযোগ ছিলো আরও এক বড় মাইলফলক ছোঁয়ার। রিকি পন্টিংয়ের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে শততম টেস্টের উভয় ইনিংসেই শতরানকারি দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হয়ে থাকতে পারতেন মুশফিক ইতিহাসের পাতায়।
অন্যদিকে, মুমিনুল হক আর সাদমান ইসলাম উভয়ই শতরানের কৃতিত্ব দেখাতে পারতেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার কোনটাই হলোনা।
চতুর্থ দিন সকালেই আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাদমান। আর লাঞ্চের ১০ মিনিট পর শতরান থেকে ১৩ রান দুরে ৮৭ রানে আউট হয়ে নিজের শতরানের সুযোগ হাতছাড়ার পাশাপাশি মুশফিকুর রহিমকে উভয় ইনিংসে শতরানের সম্ভাবনার প্রদীপও নিভিয়ে দিয়ে যান মুমিনুল।
বাংলাদেশের এই দল আয়ারল্যান্ডকে ইনিংস ব্যবধানে হারাতে পারে, সে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সিলেটে। কাজেই টাইগারদেরও মিরপুর টেস্টে জয় নিয়ে কোনই সন্দেহ ছিলনা।
থাকবেই বা কেন? ঢাকা টেস্টে টাইগারদের জয় নিয়ে সংশয় প্রকাশের কিছু নেই। যদিও কেউ কেউ বাংলাদেশের জয় নিয়ে খানিক সংশয় প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তারা হয়তো এটা ভাবেননি যে, চতুর্থ ইনিংসে ৫ সেশনে ৫ শ‘র মত পাহাড় সমান টার্গেট ছোঁয়ার মত দল আয়ারল্যান্ড না। সেশন টু সেশন হিসেব কষে চতুর্থ দিনের শেষ সেশন আর পঞ্চম দিনের ভাঙ্গা উইকেটে ব্যাট করে ৫০৯ রানের টার্গেট ছোঁয়া খুব কঠিন।
মুমিনুল আর মুশফিক দুজনই ওয়েল সেট ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে; দুজনেরই সেঞ্চুরির সম্ভাবনা ছিল প্রবল। মুমিনুল ৭৯ আর মুশফিক ৪৪ রান নিয়ে লাঞ্চে গেলেন। তারপর লাঞ্চের মাত্র ৪ মিনিট পর মুশফিকের ৫০ পূর্ণ হলো। তাই মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ দল হয়তো আজ শনিবার চতুর্থ দিন চা-বিরতি পর্যন্ত ব্যাট করবে। এবং মুমিনুল ও মুশফিককে জোড়া শতরান করার সুযোগটা দেবে। কিন্তু এক মুমিনুলই সে সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটালেন। চলতি সিরিজে আগের দুই ইনিংসে যেমন খেলেছেন, যেভাবে পঞ্চাশের পর আউট হয়েছেন, এ টেস্টের চতুর্থ দিন মানে আজ লাঞ্চের ঠিক ১০ মিনিট আগে আইরিশ লেগস্পিনার গেভিন হোয়ের খানিক ফাইটেড ডেলিভারিকে আলতোভাবে কাভার ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন মুমিনুল।
আস্থার সঙ্গেই খেলছিলেন। ধৈর্য্য ধরে বাজে বলগুলো থেকে রান করার চেষ্টায় ছিলেন। বাজে ও উচ্চাভিলাষী শটও খেলেননি তেমন। ঝুঁকি নিয়ে বিগ শট খেলতে যাননি। কিন্তু আউট হলেন যথারীতি নরম হাতে কভারে ড্রাইভ করতে গিয়ে। ওই বলটিকে অনায়াসে মাটিতে খেলতে পারতেন। তুলে মারার কোন দরকারই ছিলনা। কিন্তু ঐ অপ্রয়োজনীয় কাজটিই করেছেন মুমিনুল। আর সেই ভুলেই ভাঙ্গলো শতরানের স্বপ্ন। তার পাশাপাশি হয়ত মুশফিকের স্বপ্নরও অপমৃত্যু ঘটলো।
১০০ নম্বর টেস্টে শতরান করে কলিন ক্রাউড্রে, জাভেদ মিয়াদাদ, গর্ডন গ্রিনিজদের সাথে নাম লিখিয়েছেন দুদিন আগেই। এবার দ্বিতীয় টেস্টে সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারলে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন রিকি পন্টিংকে ছোঁয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা ছিল মিষ্টার ডিপেন্ডেবলের। সে পথে অনেকদুর এগিয়েও গিয়েছিলেন। ১৬ রানে স্পিনার ম্যাক ব্রেইনের বলে কারমাইকেলের হাতে জীবন পেয়ে আরও সতর্ক সাবধানি হয়ে ধীরে ধীরে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মুশফিক। কিন্তু মুমিনুল আউট হবার সঙ্গে সঙ্গে অধিনায়ক নাজমুল শান্ত ইনিংস ঘোষনা করায় রিকি পন্টিংয়ের পাশে নাম লিখানোর স্বপ্নটা স্বপ্নই থেকে গেল মুশফিকের।