নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর স্বাস্থ্য সহযোগিতা এবং ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক (এমইউএম) সই করেছে দুই দেশ। গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এ সমঝোতা স্মারক সই হয়।
এর আগে তারা প্রথমে একান্ত বৈঠক করেন। পরে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে দ্বিপাকি বৈঠক করেন দুই নেতা। প্রথম সমঝোতা স্মারকটি স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ এবং ভুটানের রাজকীয় সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এই সমঝোতা স্মারক সই হয়। দ্বিতীয় সমঝোতা স্মারকটি আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ ও অন্যান্য টেলিযোগাযোগ সেবার বাণিজ্য সংক্রান্ত। ভুটানের রাজকীয় সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যকার এই সমঝোতা স্মারকে সই হয়। এর আগে গতকাল শনিবার সকালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় পৌঁছেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (এইচএসআইএ) তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জেও দুই নেতার মধ্যে সংপ্তি বৈঠক হয়। এ সময় তোবগে শুক্রবারের ভ‚মিকম্পে প্রাণহানি ও য়তির খোঁজ নেন এবং নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। বৈঠক শেষে তোবগেকে অস্থায়ী অভিবাদন মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে ১৯ বার তোপধ্বনি ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন : ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে ঢাকায় আসার পর মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন। এছাড়া স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে একটি বৃরোপণ করেন তিনি। শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এর আগে শনিবার সকালে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় পৌঁছান শেরিং টোবগে। ড্রæক এয়ারের একটি বিমান সকাল ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাকে স্বাগত জানান। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং বাণিজ্য উপদেষ্টার বিকালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে। এরপর বিকাল ৩টার দিকে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাাৎ করবেন। সন্ধ্যায় একটি সরকারি ভোজসভায়ও যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী টোবগে। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আল সিয়াম এক ব্রিফিংয়ে জানান, ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাকি সফর এটি। এই সফরে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তিকে মুক্তবাণিজ্য চুক্তিতে উন্নীত করার বিষয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। আসাদ আল সিয়াম বলেন, ২২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেরিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকের পর দুই দেশের মধ্যে প্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আমরা আশা করছি, বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, যোগাযোগ, শিা, কৃষি, স্বাস্থ্য, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ, পর্যটন, সংস্কৃতি, যুব, ক্রীড়া, শিল্পসহ দ্বিপাকি সহযোগিতার বিভিন্ন ত্রে নিয়ে আলোচনা হবে। বৈঠক শেষে ভুটানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ, ভুটানের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ এবং কৃষি সহযোগিতা বিষয়ক তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই বিষয়গুলো এখনও আলোচনাধীন। ২৩ নভেম্বর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাাৎ করবেন। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাাৎ করার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান পররাষ্ট্র সচিব। এছাড়া বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাাৎ করতে পারেন। তিনি বলেন, ২৪ নভেম্বর সকালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দুদিনের সফর শেষে থিম্পুর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন তাকে বিদায় জানাবেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টার বৈঠক : বাংলাদেশ সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগে’র সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকার একটি হোটেলে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দ্বিপাকি সম্পর্কোন্নয়ন এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়। বানিজ্য মন্ত্রনালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৈঠকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং তোবগে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভুটানের দ্বিপাকি সম্পর্ক খুবই চমৎকার। বাণিজ্য বৃদ্ধি দুদেশের বিদ্যমান সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে ভুটানের সঙ্গে একমাত্র দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি রয়েছে উল্লেখ করে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভুটান বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাকি বাণিজ্য বাড়াতে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী। কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ভুটানের জন্য বরাদ্দ করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শেরিং তোবগে। তিনি বলেন, কুড়িগ্রামের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতোমধ্যে বেশ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভুটান সরকার বায়োডাইভারসিটি নগর গেলেফু নির্মানের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রস্তাবিত এই নগরটি ভুটানের সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যকে রা করে তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে উন্নত ও টেকসই অবকাঠামো তৈরি করা হবে। গেলেফু নগর নির্মাণে প্রচুর নির্মাণ উপকরণ প্রয়োজন হবে উল্লেখ করে তিনি এগুলো বাংলাদেশ হতে আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ থেকে ঔষধ, সিরামিক পণ্য , তৈরি পোশাক ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী আমদানিতে ভুটান সরকারের আগ্রহের কথা জানান। বাংলাদেশী পর্যটকদের ভুটানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পর্যটকদের জন্য যেখানে ভুটান সরকার প্রতিরাত অবস্থানের জন্য সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ফি (এসডিএফ) একশত ডলার নির্ধারণ করেছে সেখানে বাংলাদেশসহ দণি এশিয়ার পর্যটকদের জন্য তা মাত্র পনের ডলার।” এ সুযোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশিদের ভুটান ভ্রমণে আগ্রহী করতে পদপে নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ভুটানের স্বীকৃতি দানের কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাণিজ্য বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে দ্বিপাকি সম্পর্ক আরও মজবুত ভিত্তি পাবে। মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন বাংলাদেশ – ভুটান সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। এ সময় তিনি দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরো বেশি বাণিজ্য সফর ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে এখন বিশ্বমানের ঔষধ, সিরামিক পণ্য ,তৈরি পোষাক, নির্মান উপকরণ তৈরি হচ্ছে। এসব পণ্য আমদানির মাধ্যমে বাণিজ্য আকার বৃদ্ধির সুযোগ নেওয়ার জন্য ভুটান সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি। বৈঠকে ভুটানের ফরেন অ্যাফেয়ার্স ও এক্সটার্নাল ট্রেড মিনিস্টার ডি এন ধুনগায়েল, ইন্ডাস্ট্রি,কমার্স এন্ড এমপ্লয়মেন্ট মিনিস্টার লায়েন পো নামগায়েল দর্জি এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে দুই দেশের বিভিন্ন দ্বিপীয় বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শনিবার সকালে তিনদিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আমন্ত্রণে তার এ ঢাকা সফর। শনিবার সকালে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর থেকে সাভার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে যান। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টোবগে সফরের প্রথম দিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক দ্বিপীয় বৈঠকে মিলিত হবেন। এছাড়া একই দিনে প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিপীয় বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ, শিা, পর্যটন, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াসহ বিভিন্ন েেত্র সহযোগিতার বিষয় আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে দুই দেশের মধ্যে তিনটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে। সফরের দ্বিতীয় দিন আজ রোববার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবেন। একই দিন ঢাকার শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী। অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা ভুটানের সরকার প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাাৎ করবেন। সফর শেষে তিনি আগামীকাল সোমবার ঢাকা ছাড়বেন।
: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং সফররত ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বৈঠক করেছেন। গতকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রথমে তারা একান্ত বৈঠক করেন। পরে দুই দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন দুই নেতা। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের