নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশিদের কাছে ইজারার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। গতকাল শনিবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম প্রেসকাবের সামনে এই কর্মসূচি শুরু হয়। বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্কপের নেতাকর্মীরা এই এই কর্মসূচি পালন করবেন বলে জানান। চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার (এনসিটি), লালদিয়ার চরসহ চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো স্থাপনা, ডিপি ওয়ার্ল্ডসহ দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারা বন্ধের দাবিতে এ গণঅনশন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। অনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্কপ কেন্দ্রীয় নেতা ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ও বন্দর সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এস কে খোদা তোতন, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের খোরশেদুল আলম, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ ম জামাল উদ্দিন, ডক শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক তসলিম হোসেন সেলিম, টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মছিউদ্দৌলা, স্কপের যুগ্ম আহŸায়ক রিজোয়ানুর রহমান খান, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম জেলা শাখার আহŸায়ক হেলাল উদ্দিন কবির, বিএলএফ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি নুরুল আবসার তৌহিদ। বক্তব্যে আনোয়ার হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ও আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এনসিটি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে সফল কনটেইনার টার্মিনাল। অথচ এটিকে বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে তুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থবিরোধী ও আত্মঘাতী। এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। তপন দত্ত বলেন, বিগত সরকারের সময়ে নেওয়া এই একতরফা সিদ্ধান্ত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বহাল রেখেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশের কৌশলগত সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার এই চক্রান্ত জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। সরকারকে অবশ্যই এনসিটি ও লালদিয়ার চর ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে, না হলে অন্যথায় চট্টগ্রাম হরতাল ও অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে অচল করে দেওয়া হবে। সভাপতির বক্তব্যে কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো জনগণের সম্পদ রা করা, বিক্রি বা ইজারা দেওয়া নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত অবাধ ও নিরপে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে মতা হস্তান্তর করা। একই সঙ্গে বন্দর শ্রমিকদের হয়রানি ও অযৌক্তিক কারণ দর্শানো নোটিশের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। বক্তারা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সা¤প্রতিক গণবিজ্ঞপ্তিতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেন, প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা বা পুলিশি বাধা দিয়ে কোনো ন্যায্য আন্দোলনকে দমন করা যায়নি, এবারও যাবে না। শ্রমিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের অধিকার আদায়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে। অনশন কর্মসূচিতে স্কপ নেতৃবৃন্দ ঘোষণা দেন- সরকার যদি অবিলম্বে এনসিটি ও লালদিয়ার চর ইজারা বাতিলের ঘোষণা না দেয়, তবে সার্বিক কর্মবিরতি, চট্টগ্রাম হরতাল ও বন্দর অবরোধসহ আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। এতে অন্য বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর লাভজনক হওয়ার পরেও বিদেশি কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদীদের এ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নিউমুরিং টার্মিনাল ও লালদিয়য়ার চর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে। বিনা প্রতিরোধে এ চুক্তি বাস্তবায়নের ল্েয অন্তর্বর্তী সরকার বন্দর এলাকায় এক মাসের জন্য সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার বিনা টেন্ডারে ডিপি ওয়ার্ল্ডকে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল তুলে দেওয়ার আয়োজন সম্পন্ন করেছিল। গণঅভ্যুত্থানের পরও বর্তমান সরকার কেন আওয়ামী লীগের এ চক্রান্ত বাস্তবায়নের কাজ এগিযে নিচ্ছে, তার জবাব সরকারকে দিতে হবে। কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন- জাহেদ উদ্দিন শাহিন, শাহনেওয়াজ চৌধুরী মিনু, ইফতেখার কামাল খান, কাজী আনোয়ারুল হক হুনিসহ স্কপভুক্ত শ্রমিক সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন টিইউসির কেন্দ্রীয় সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টু। সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবির সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি কমরেড শাহ আলম, বাসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার ইনচার্জ আল কাদেরী জয়, গণমুক্তি ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা সভাপতি রাজা মিয়া, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি মিরাজ উদ্দিন, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশন জেলা আহŸায়ক জাহেদুন্নবী কনকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র, নারীসহ পেশাজীবি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।