November 12, 2025, 1:24 am
শিরোনাম :
ব্রেকিং নিউজ :

ঝুলে গেলো পে-স্কেল আন্দোলনে যেতে পারেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গত ১০ বছরে নতুন কোনও পে-স্কেল পাননি। এ নিয়ে এমনিতেই তাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। এর মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, নতুন পে কমিশনের সিদ্ধান্ত নেবে আগামী সরকার। রবিবার (৯ নভেম্বর) সচিবালয়ে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তার এমন মন্তব্যে ুব্ধ ও হতাশ হন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নতুন বছরের শুরুতেই নতুন পে-স্কেল আদায়ে সরকারকে চাপে রাখার কথা ভাবছেন তারা। সচিবালয়সহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

কারণ ব্যাখ্যা করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য বহুল প্রতীতি নতুন পে-স্কেল ২০২৬ সালের শুরুতেই ঘোষণা হবে– এমন প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন অর্থ উপদেষ্টা। বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের তা জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু ৯ নভেম্বর উপদেষ্টা জানান, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেল দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচিত সরকার। এই বক্তব্য মানতে পারছেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিষয়টি সরকার আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেণ করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে বলে দাবি করেন তারা।

জানা গেছে, ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের আগেই ঘোষণার অপোয় ছিল নতুন পে-স্কেল। এর ফলে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। এই সংবাদে খুশি ছিলেন দেশের সাড়ে ১৪ লাখ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা দিন গুনছিলেন, কবে নাগাদ নতুন বছর শুরু হবে, আর কবে বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে সরকার।

সূত্র জানিয়েছে, গত ২৭ জুলাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন পে-কমিশন গঠন করে অন্তর্র্বতী সরকার। এই কমিশনের প্রধান করা হয় সাবেক অর্থ সচিব জাকির আহমেদ খানকে। কমিশনকে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। এই কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতেই নবম পে-স্কেল ঘোষণা হওয়ার কথা; যা সরকারি চাকরিজীবীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি বেতন কাঠামোয় বড় পরিবর্তন আনতে পারে। বিষয়গুলো চূড়ান্ত করেও এনেছিল কমিশন। বর্তমানে ২০১৫ সালের পে-স্কেল অনুসারে বেতন-ভাতা পান সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বেতন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নতুন স্কেলে মূল বেতন দ্বিগুণ হতে পারে। এই ইঙ্গিত বাস্তবায়িত হলে, বর্তমান কাঠামো অনুযায়ী, প্রথম গ্রেডের সর্বোচ্চ মূল বেতন দাঁড়াবে ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এবং ২০তম গ্রেডের সর্বনি¤œ বেতন হবে ১৬ হাজার ৫০০ টাকা। কমিশন মনে করছে, বিদ্যমান ২০টি গ্রেড থেকে সংখ্যা কমানো হলে নি¤œতম বেতন আরও কিছুটা বাড়তে পারে। বর্তমানে সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ বেতনের অনুপাত প্রায় ১০ দশমিক ১; যা নতুন কাঠামোতেও ৮ দশমিক ১ থেকে ১০ দশমিক ১-এর মধ্যে রাখার বিষয়ে কমিশন পর্যালোচনা করছে।

জানা গেছে, সরকারি ব্যয় খাতে লাগাম টানতে না পারায় এমনিতেই আর্থিক চাপ বেড়েছে সরকারের ওপর। আগের বছরের মতো চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের শুরুতে কৃচ্ছ্রসাধনের ঘোষণা দিলেও বাস্তবে তা করতে পারছে না সরকার। একদিকে বাড়ছে ভর্তুকির চাপ, অন্যদিকে সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন শিা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির চাপ। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপও প্রায় দ্বিগুণ হতে চলেছে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ছিল প্রায় ৮২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। নতুন অর্থবছরে এই ব্যয় আরও প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের (২০২৫-২৬) বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮৪ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। কিন্তু নতুন পে-স্কেল কার্যকর হলে সরকারের ব্যয় বেড়ে অতিরিক্ত ৬৫ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত দাঁড়াতে পারে। এটি সরকারের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। পে-কমিশনের সদস্যরা জানিয়েছেন, সরকারের প থেকে শুধু প্রস্তাব নয়, অতিরিক্ত অর্থের উৎস সম্পর্কেও ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


ফেসবুক