Dhaka ০১:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চীন-যুক্তরাষ্ট্র এখন ভিন্ন ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধে আছে- বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:৪৩:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
  • ৭১ Time View

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীন ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আবারও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এখনও বুঝতে পারছে না, চীনের সঙ্গে কোন কৌশলে আলোচনা এগিয়ে নিতে হবে।

সবশেষ উত্তেজনা দেখা দেয় ৯ অক্টোবর। সেদিন বেইজিং বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নতুন উপাদানও যুক্ত হয়েছে। ফলে এখন থেকে বিরল খনিজ রপ্তানি সীমিত করবে দেশটি। অর্থ্যাৎ, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে যুদ্ধবিমান তৈরির জন্য অপরিহার্য খনিজের ওপর চীন আরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বিরল খনিজ উপাদানযুক্ত কোনো পণ্য রপ্তানি করতে হলে চীনা সরকারের অনুমোদন নিতে হবে। পাশাপাশি সেই পণ্য ব্যবহারের উদ্দেশ্যও জানাতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারণের পর বিরল খনিজ নিয়ে চীন এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। মার্কিন সম্প্রসারিত নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে নির্দিষ্ট বিদেশি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকারকে। এমন উদ্যোগ চীনে সর্বাধুনিক সেমিকন্ডাক্টর চিপ সরবরাহ সীমিত করতে পারে। ওয়াশিংটন চীনের সঙ্গে সংযুক্ত জাহাজগুলোর ওপরও শুল্ক আরোপ করেছে। যেটির উদ্দেশ্য মার্কিন জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে চাঙ্গা করা এবং বৈশ্বিক শিপিং বাণিজ্যে চীনের প্রভাব কমানো। প্রতিশোধ হিসেবে চীনও মার্কিন মালিকানাধীন, পরিচালিত, নির্মিত কিংবা পতাকাবাহী জাহাজগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ করেছে।

যদিও কানাডার এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা ও কৌশল বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিনা নাজিবুল্লাহ বলছেন, চিপ রপ্তানি ও জাহাজ শিল্পে যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্ক নির্ধারণ করেছে তা চীনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে দুই দেশই ‘তথ্য যুদ্ধে’ লিপ্ত হয়েছে। যেখানে উভয়েই একে অপরের বিরুদ্ধে তাদের নীতির মাধ্যমে বিশ্বকে জিম্মি করে রাখার অভিযোগ তুলেছে।

নাজিবুল্লাহ বলছেন, ক‚টনৈতিক আলোচনার বাইরেও চীন নিজের খেলা অনেক উঁচু স্তরে নিয়ে গেছে। তারা প্রথমবারের মতো এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে যা অন্য দেশগুলোর ওপরও প্রভাব ফেলছে। চীন মূলত এক ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সেটি হলো- ওয়াশিংটন যতটা চাপ বাড়াবে, পাল্টা হিসেবে বেইজিংও ততটা বাড়াবে। এটির লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রকে পিছু হটানো। তিন মাস আগের বাণিজ্য যুদ্ধের তুলনায় এটি একেবারে ভিন্ন ধরনের সংঘাত।

আটলান্টিক কাউন্সিলের গেøাবাল চায়না হাবের জ্যেষ্ঠ ফেলো (অস্থায়ী) ডেক্সটার টিফ রবার্টস। তিনি বলছেন, চলতি মাসের শেষ দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থার (এপেক) শীর্ষ সম্মেলন। ওই সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের বৈঠক হওয়ার কথা। এর আগে চীনের পক্ষ থেকে ক্ষমতার প্রদর্শনী চলছে।

রবার্টস বলেন, এ অবস্থায় আপনি যদি ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপগুলোর দিকে নজর দেন; দেখবেন তারা একেবারে বিক্ষিপ্ত ও অনিশ্চিত অবস্থায় আছে।

শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন তাঁর সঙ্গে শি জিনপিংয়ের বৈঠকটি হবে না। কিন্তু দুই দিন পরই বলেন, বৈঠক হবে। এ বিষয়টিকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে রবার্টস বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন আসলে জানে না চীনের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হবে। তারা বোঝে না যে, চীন অনেক কষ্ট সহ্য করতে রাজি আছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হুমকিকে সহজে ভয় পায় না।

অন্যদিকে, বেইজিং ট্রাম্পের আচরণ বুঝে গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেকে ‘বিগ ডিল মেকার’ মনে করেন। ফলে তিনি চীনের সঙ্গে কোনো চুক্তি করলে সেটি বড় চুক্তিই হবে। রবার্টস বলেন, চীনও চায় যুক্তরাষ্ট্র বড় চুক্তি করুক। তবে সে চুক্তি করতে হলে ট্রাম্প প্রশাসনকে ছাড় দিতে হবে। এই ছাড় নিয়ে দর-কষাকষির কৌশল হিসেবে তারা আগে থেকেই বাড়তি চাপ আরোপ করে রেখেছে।

কানাডার এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা ও কৌশল বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিনা নাজিবুল্লাহর বক্তব্যে আবার ফেরা যাক। তিনি বলছেন, মূলত ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময়ই চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে যখন সরকার পরিবর্তন হলো তখন অনেক দেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। কিন্তু চীন একাধিক জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র যেসব নীতিতে অন্য দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সেটির চীনা সংস্করণ তৈরি করেছে। সেটিই এখন কাজে লাগছে। দেশটি এখন জাতীয় নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে রপ্তানিতে সীমা আরোপ করতে পারছে।

ভিনা নাজিবুল্লাহ বলেন, সব দেশেরই আসলে চীনের মতো প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল। চীনের কৌশলে একটি বিষয় স্পষ্ট। সেটি হলো- নিজেদের প্রয়োজনে বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে।

(কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে সংক্ষেপে অনুবাদ)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

চীন-যুক্তরাষ্ট্র এখন ভিন্ন ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধে আছে- বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা

Update Time : ০৮:৪৩:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীন ও রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আবারও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এখনও বুঝতে পারছে না, চীনের সঙ্গে কোন কৌশলে আলোচনা এগিয়ে নিতে হবে।

সবশেষ উত্তেজনা দেখা দেয় ৯ অক্টোবর। সেদিন বেইজিং বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই নিষেধাজ্ঞার তালিকায় নতুন উপাদানও যুক্ত হয়েছে। ফলে এখন থেকে বিরল খনিজ রপ্তানি সীমিত করবে দেশটি। অর্থ্যাৎ, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে যুদ্ধবিমান তৈরির জন্য অপরিহার্য খনিজের ওপর চীন আরও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিদেশি কোম্পানিগুলোকে বিরল খনিজ উপাদানযুক্ত কোনো পণ্য রপ্তানি করতে হলে চীনা সরকারের অনুমোদন নিতে হবে। পাশাপাশি সেই পণ্য ব্যবহারের উদ্দেশ্যও জানাতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারণের পর বিরল খনিজ নিয়ে চীন এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। মার্কিন সম্প্রসারিত নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে নির্দিষ্ট বিদেশি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকারকে। এমন উদ্যোগ চীনে সর্বাধুনিক সেমিকন্ডাক্টর চিপ সরবরাহ সীমিত করতে পারে। ওয়াশিংটন চীনের সঙ্গে সংযুক্ত জাহাজগুলোর ওপরও শুল্ক আরোপ করেছে। যেটির উদ্দেশ্য মার্কিন জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে চাঙ্গা করা এবং বৈশ্বিক শিপিং বাণিজ্যে চীনের প্রভাব কমানো। প্রতিশোধ হিসেবে চীনও মার্কিন মালিকানাধীন, পরিচালিত, নির্মিত কিংবা পতাকাবাহী জাহাজগুলোর ওপর শুল্ক আরোপ করেছে।

যদিও কানাডার এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা ও কৌশল বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিনা নাজিবুল্লাহ বলছেন, চিপ রপ্তানি ও জাহাজ শিল্পে যুক্তরাষ্ট্র যে শুল্ক নির্ধারণ করেছে তা চীনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে দুই দেশই ‘তথ্য যুদ্ধে’ লিপ্ত হয়েছে। যেখানে উভয়েই একে অপরের বিরুদ্ধে তাদের নীতির মাধ্যমে বিশ্বকে জিম্মি করে রাখার অভিযোগ তুলেছে।

নাজিবুল্লাহ বলছেন, ক‚টনৈতিক আলোচনার বাইরেও চীন নিজের খেলা অনেক উঁচু স্তরে নিয়ে গেছে। তারা প্রথমবারের মতো এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে যা অন্য দেশগুলোর ওপরও প্রভাব ফেলছে। চীন মূলত এক ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সেটি হলো- ওয়াশিংটন যতটা চাপ বাড়াবে, পাল্টা হিসেবে বেইজিংও ততটা বাড়াবে। এটির লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রকে পিছু হটানো। তিন মাস আগের বাণিজ্য যুদ্ধের তুলনায় এটি একেবারে ভিন্ন ধরনের সংঘাত।

আটলান্টিক কাউন্সিলের গেøাবাল চায়না হাবের জ্যেষ্ঠ ফেলো (অস্থায়ী) ডেক্সটার টিফ রবার্টস। তিনি বলছেন, চলতি মাসের শেষ দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থার (এপেক) শীর্ষ সম্মেলন। ওই সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও শি জিনপিংয়ের বৈঠক হওয়ার কথা। এর আগে চীনের পক্ষ থেকে ক্ষমতার প্রদর্শনী চলছে।

রবার্টস বলেন, এ অবস্থায় আপনি যদি ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপগুলোর দিকে নজর দেন; দেখবেন তারা একেবারে বিক্ষিপ্ত ও অনিশ্চিত অবস্থায় আছে।

শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন তাঁর সঙ্গে শি জিনপিংয়ের বৈঠকটি হবে না। কিন্তু দুই দিন পরই বলেন, বৈঠক হবে। এ বিষয়টিকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে রবার্টস বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসন আসলে জানে না চীনের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতে হবে। তারা বোঝে না যে, চীন অনেক কষ্ট সহ্য করতে রাজি আছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হুমকিকে সহজে ভয় পায় না।

অন্যদিকে, বেইজিং ট্রাম্পের আচরণ বুঝে গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেকে ‘বিগ ডিল মেকার’ মনে করেন। ফলে তিনি চীনের সঙ্গে কোনো চুক্তি করলে সেটি বড় চুক্তিই হবে। রবার্টস বলেন, চীনও চায় যুক্তরাষ্ট্র বড় চুক্তি করুক। তবে সে চুক্তি করতে হলে ট্রাম্প প্রশাসনকে ছাড় দিতে হবে। এই ছাড় নিয়ে দর-কষাকষির কৌশল হিসেবে তারা আগে থেকেই বাড়তি চাপ আরোপ করে রেখেছে।

কানাডার এশিয়া প্যাসিফিক ফাউন্ডেশনের গবেষণা ও কৌশল বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভিনা নাজিবুল্লাহর বক্তব্যে আবার ফেরা যাক। তিনি বলছেন, মূলত ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের সময়ই চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে যখন সরকার পরিবর্তন হলো তখন অনেক দেশ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল। কিন্তু চীন একাধিক জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র যেসব নীতিতে অন্য দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সেটির চীনা সংস্করণ তৈরি করেছে। সেটিই এখন কাজে লাগছে। দেশটি এখন জাতীয় নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে রপ্তানিতে সীমা আরোপ করতে পারছে।

ভিনা নাজিবুল্লাহ বলেন, সব দেশেরই আসলে চীনের মতো প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল। চীনের কৌশলে একটি বিষয় স্পষ্ট। সেটি হলো- নিজেদের প্রয়োজনে বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে।

(কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে সংক্ষেপে অনুবাদ)