(বাবুগঞ্জ, বরিশাল) : আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে শুরু হয়েছে তীব্র মনোনয়ন যুদ্ধ। দলের দুই হেভিওয়েট নেতা- জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী বেগম সেলিমা রহমান এবং দলের ভাইস চেয়ারম্যান, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন -এর মধ্যে প্রতিদ্ব›িদ্বতা এখন সরবভাবে দৃশ্যমান। দলের ভেতরে এখন আলোচনার কেন্দ্রে কে হচ্ছেন বরিশাল-৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী?- এই প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বরিশাল জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটি বরাবরই জাতীয় রাজনীতির আলোকবর্তিকা হয়ে ওঠে। বিগত নির্বাচনগুলোতেও এ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্ব›িদ্বতা তীব্র আকার ধারণ করেছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। দুই হেভিওয়েটের লড়াইএকদিকে বেগম সেলিমা রহমান- বিএনপির বর্ষীয়ান রাজনীতিক, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের দু:সময়ের কান্ডারি।
বাবুগঞ্জের কৃতি সন্তান এই নেত্রীর রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক উত্তরাধিকার। তার পরিবার দেশের রাজনীতিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে- বাবা বিচারপতি আব্দুল জব্বার খান ছিলেন পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার, ভাইদের মধ্যে রয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, প্রখ্যাত সাংবাদিক এনায়েতউল্লাহ খান, কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, সাংবাদিক সাদেক খান ও নিউ এইজ প্রকাশক শহীদুল্লাহ খান। ২০০১ সালের বিএনপি সরকারের সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি। আন্দোলন-সংগ্রামে একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। তবে বয়সজনিত কারণে বর্তমানে কিছুটা শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছেন এই প্রবীণ রাজনীতিক। অন্যদিকে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এবং সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির আইনি লড়াইয়ের মুখপাত্র হিসেবে তিনি দলের অভ্যন্তরে বিশেষ মর্যাদা অর্জন করেছেন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বরিশাল-৩ আসনে তিনিই ছিলেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী, এবং তৃণমূল পর্যায়ে তার অনুসারীদের প্রভাবও দৃশ্যমান। দ্বিধাবিভক্ত তৃণমূলবাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপিতে এখন কার্যত দুটি গ্রæপ সক্রিয়। একটির নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহŸায়ক সুলতান আহমেদ খান, অন্যটির নেতৃত্বে সাবেক সভাপতি ইসরত হোসেন কচি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালে সুলতান আহমেদ খানকে আহŸায়ক ও অহিদুল ইসলাম প্রিন্সকে সদস্য সচিব করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহŸায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তবে এই কমিটি ঘোষণার পর থেকেই বিরোধ তীব্র হয়। সাবেক সভাপতি ইশরাত হোসেন কচি বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে রাজপথে যারা হামলা-মামলা মোকাবিলা করেছেন, তাদের মূল্যায়ন না করে পছন্দের লোক দিয়ে উপজেলা কমিটি করা হচ্ছে-এতে তৃণমূলের ক্ষোভ বাড়ছে। মনোনয়ন নিয়ে কৌত‚হলসেলিমা রহমানের অনুসারীরা মনে করেন, তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, ত্যাগ ও পারিবারিক ঐতিহ্যই তাকে মনোনয়নে এগিয়ে রাখবে। অন্যদিকে, জয়নুল আবেদীনের সমর্থকরা দাবি করছেন, তৃণমূলের সঙ্গে তার যোগসূত্র, গত নির্বাচনে প্রার্থী থাকা এবং আইনি নেতৃত্বের কারণে তিনি এবার মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য। বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব অহিদুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা তার পক্ষেই কাজ করব। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ধানের শীষের বিজয়। বিশ্লেষকদের মতরাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বরিশাল-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন লড়াই কেবল ব্যক্তিগত অবস্থানের নয়, বরং দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বার্তা ও কৌশলকেও স্পষ্ট করবে। তারা মনে করেন, এই আসনের প্রার্থী নির্ধারণ হবে বিএনপির ভবিষ্যৎ সংগঠনগত দিকনির্দেশনা ও প্রজন্মগত ভারসাম্যের পরীক্ষাও। কে হবেন বরিশাল-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী-বেগম সেলিমা রহমান না অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় এখন তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, এই আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন যুদ্ধই এখন বাবুগঞ্জ-মুলাদী জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।